আবাসন শিল্পে অচলাবস্থা


একটি দেশের উন্নয়নের চিত্র বুজা যায় সেই দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা, আবাসন ব্যাবস্থা,কল কারখানা শিল্পে কতটা উন্নতি করতে পেরেছে। এছারাও আরও অনেক বিষয় আছে, একটি দেশের উন্নয়নের পরিচয় তুলে ধরার জন্য।তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, একটি রাষ্ট্রের নগরায়নের উন্নতি করা। আদিম কাল থেকেই নগরায়নের উন্নতির চিন্তা মানুষজন করে আসছে। সেই জঙ্গলের খোলা আকাশের নিচে বসবাস করার সময় থেকে শুরু করে অদ্দবদি পর্যন্ত মানুষ এখনও থাকার জায়গাটা সুন্দর করার জন্য পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্নতম একটি চাহিদা হল বাসস্থান। মানুষের চিন্তা শক্তিকে সুন্দর ও গতিশীল করার জন্য বসবাসের একটি সুন্দর জায়গা দরকার। অপরিকল্পিত জায়গায় কখনই আপনি ভালো কোন পরিকল্পনা মাথায় আনতে পারবেন না। তাই সুনাগরিক মানুষকে গড়ে তোলার জন্য আবাসন শিল্প খুবই গুরুত্তপূর্ণ একটি বিভাগ। এটার প্রতি যেই রাষ্ট্র বেশি নজর দিয়েছে সেই রাষ্ট্রই উন্নতির দাবিদার হিসাবে নিজেকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে থেকে লোকজন ভ্রমন করতে যায় উন্নত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে। ঘুরতে যাওয়ার চাহিদায় বেশিরভাগই থাকে মানুষের গড়া সৌন্দর্য।


যেমনঃ ১/ বুরজ আল খালিফা (দুবাই)
             ২/ পেট্রোনাস টাওয়ার (কুয়ালালামপুর)
             ৩/আইফেল টাওয়ার, সহ অসংখ্য ভবন দেখার জন্য মানুষ ভীর জমায় সেই সমস্ত দেশগুলোতে। নগরায়নের উন্নতি করে দেশগুলো পর্যটন শিল্প থেকে কামিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের একটা অর্থ। বর্তমান বিশ্বের সাথে আমরা তাল মিলাচ্ছি ঠিকি, কিন্তু আবাসন শিল্পের মত একটা বড় সেক্টরে আমরা পিছিয়ে আছি। আবাসন শিল্পের উন্নতি বা নগরায়নের উন্নয়ন যাই বলি না কেন এটা কোন রাষ্ট্রের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ও কাজ করতে হয়। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার সুযোগ করে দিলে নগরায়নের উন্নতি খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে। আমরা আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়ার দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তাদের উন্নয়নের চিত্র। দিল্লি,মুম্বাই,চেন্নাই, এর পাশাপাশি কলকাতার মত একটি এলাকা সেটা দেখলেও এখন চেনার উপায় নেই এটা কলকাতা নাকি ১ম শ্রেণীর কোন দেশের শহর।
আর সেই জায়গাটায় আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। বিগত কয়েক বছর আগে আবাসন শিল্পে একটা বড় ধরনের বিপ্লব শুরু হয়েছিল। কিন্তু হটাত করে এই বিপ্লবটা থেমে গেলো। এর প্রকৃত কারণ এখনও পুরোপুরি বের করা যায়নাই। কিন্তু এই ধ্বংসের কারণে এই শিল্পের বড় ধরনের একটা ক্ষতি হয়ে গেল। যেটা পুরন করা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধংসের নেপত্থে কিছু কারনের মধ্যে কয়েকটি হল।

সহজ লভ্য হওয়াঃ ঐ সময়টাতে বেবসাটা অনেক সহজলভ্য হয়ে গিয়েছিল। প্রকৃত বেবসসায়ি কিছু থাকলেও, বেবসা না বুজা মানুষের সংখাই বেশি ছিল। যার কারণে মানুষের আমানতের সঠিক ব্যাবহার করতে পারেনি অনেক কোম্পানিই। যেই জন্যে বড় ধরনের একটা গ্রাহক সংখ্যা এই সেক্টর থেকে হারিয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াঃ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিতি নৈতিকতা ঠিক থাকার পরও বেবসায়িক প্লান ভালো না হবার ফলে বেশিদিন তারা বিজনেস করতে সক্ষম হয়নাই। যার কারণে অল্পদিনেই তারা দেউলিয়া হয়ে যায়। তাদের কাছেও অনেক গ্রাহক তাদের সাথে বড় ধরনের একটা অর্থনৈতিক খতিতে পরে।

দায়বদ্ধতা না থাকাঃ বেশিরভাগ কোম্পানিগুলোর কোন দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা ছিলনা। জবাবদিহিতা না থাকার কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান একরোখা হয়ে যায়। গ্রাহককে তেমন কোন মূল্যায়ন করা হতনা। একটি কোম্পানির মুল শক্তিই হল তাদের গ্রাহক। গ্রাহক যদি তার বিনিয়োগের জবাবদিহিতা না পায় তাহলে সেখানে গ্রাহক বেশিদিন টিকেনা। সেখান থেকেও গ্রাহক হারা হয়ে গেছে এই সেক্টর।

আয় ব্যায়ের সামঞ্জস্য না থাকাঃ অনেকের জীবনের প্রথম ব্যাবসা হয়, আবাসন ব্যাবসা। ব্যাবসায়িক বুদ্ধি ভালো না থাকার কারণে আয় ব্যায়ের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারে নাই। জার কারণে অল্পতেয় ব্যাবসা গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে।

এছারাও আরও অনেক সমস্যার কারণে এই সেক্টরটা অচলাবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা অনেক জরুরি। তানা হলে এই উন্নয়নের দার প্রান্তে দারিয়ে আমরা বেশিদুর যেতে পারবোনা। একটা সময় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলো সাচ্ছন্দে চলতে পারত। ব্যাংক এর বড় বড় গ্রাহকই ছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ তারাও এই সেক্টর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই বিভাগে বিনিয়োগ করলে অন্যদের থেকে বেশি মুনাফা পেত গ্রাহক। যেই সুযোগটাও এখন হারিয়ে গেছে। যারা বর্তমানে এই সেক্টরে টিকে আছে তারাও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তাও নয়। বর্তমানে অবিক্রীত রেডি ফ্লাটের সংখা প্রায় লক্ষাদিক। এছারাও আবাসন শিল্পের সবচেয়ে বড় সংস্থা (রিহ্যাব),এই সংস্থাও এখন নাজুক অবস্থা। যেখানে সদস্য সংখা ছিল কয়েক হাজার সেখানে বর্তমানে সদস্য সংখা কয়েকশ। এই অচলাবস্থা থেকে যদি বের হতে না পারে তাহলে যারা টিকে আছে তারাও এই সেক্টর থেকে নিজেদের অবস্থান হারিয়ে ফেলবে। এই বিভাগকে যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তানা হলে এই অচলাবস্থা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হবে। তবে চলতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য এই সেক্টরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। তবে পাশাপাশি ব্যাংক গুলোকেও আবার পূর্বের নিতিমালা ফিরিয়ে এনে এই বিভাগটাকে শক্তিশালি করার জন্য মনোযোগ দিতে হবে। গ্রাহক বর্তমান অবস্থায় নতুন করে এই সেক্টরে বিনিয়োগ করতে গেলে অনেক চিন্তা করে। তাদের চিন্তারও যৌক্তিক কারণ আছে। আগের মত এতটা সহজে আর বিনিয়োগ করবেনা। সেই জন্য সরকারের বিশেষ সহযোগিতাড় প্রয়োজন। সেই জন্য যদি কোন নিতিমালা করা লাগে তাহলে সেটাও করা হোক। দেশের সার্বিক উন্নয়নে আবাসন শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর দেশ গড়ার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার অবস্থান তৈরি করা হোক। এই বিষয়ে সকলের সুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন।