বদ নজরের প্রভাব



বদ নজর বা কুনজর খারাপ নজর, এই শব্দগুলো আমাদের সমাজে অনেক পরিচিত। বিশেষ করে যারা বিশ শতকের আগে জন্ম গ্রহন করেছেন। তাদের বেশিরভাগ এই শব্দগুলোর সাথে গভীরভাবে জরিত। গ্রাম অঞ্চলে এখনো দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের গলায় হাতে পায়ে অসংখ্য তাবিজ, সুতা, ঝুলিয়ে রাখতে। কখনো কখনো বাচ্চার শরীর থেকে তাবিজের ওজন বেশি হয়ে যায়। এই ব্যবস্থা শুধু মাত্র এই বদ নজর থেকে বাচার জন্য। এখন প্রশ্ন হলো এই বদ নজর কি শুধুমাত্র মানুষ থেকে আসে নাকি মানুষ ছাড়া অন্য কোন জাতি থেকে আসে? আর আসলেও এর থেকে বাঁচার উপায় কি? আর ইসলাম ও বা কি বলে এ বিষয়ে? সেই বিষয়েই সংক্ষিপ্ত কিছু তুলে ধরব আপনাদের সামনে। *বদ নজর বা মানুষের নজর লাগা এই বিষয়টা হলো কোন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের খারাপ চিন্তায় বা খারাপ নজর এর প্রতিফলন ঘটা আর এই বিষয়টাকে অনেকে কুসংস্কার বলে। কিন্তু মজার বিষয় হলো এটা কোন কুসংস্কার না, বিশেষ করে যারা মুসলমান বা কোরআন হাদিস মানে। কোরআন হাদিস দারা অসংখ্য প্রমান রয়েছে এই বিষয়ের। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আর কাফিররা যখন উপদেশ বানী শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আসরে ফেলবে, তারা বলে’এ তো এক পাগল (সূরা আল কলম-৫১) আর হাদিসে এভাবে আছে হাফেয ইবনে কাছির (রা:) ইবনে আব্বাস (রা:) এবং মুজাহিদ (রা:) থেকে বর্ননা করেন যে “তোমার প্রতি বদ নজর দিবে” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে তোমাকে রুগি বানিয়ে দিবে যদি তোমার প্রতি আল্লাহর রহম নাকে থাকে। এই সমস্ত আয়াত ও হাদিসের বানী দ্বারা বুঝা যায় যে বদ নজরের প্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বা সৃষ্টকর্তা তার গুনাগুন গাওয়ার জন্য মানুষ এবং জিন জাতি তৈরি করেছেন। সকলেই আল্লাহর হুকুম পালন করছে এ পৃথিবীতে। যেমনটা আল্লাহ বলেন, আমি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য (আল-কোরআন) এই ক্ষেত্রে মানুষের পাশাপাশি জিন জাতির প্রভাব ও আমরা দেখতে পাই। বর্তমান আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ঘাটলে বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে এর সত্যতা পাওয়া যায়।তাই মানুষের পাশাপাশি জিন জাতির বদ নজর ও কারো না কারো উপর পড়তে পারে। বদ নজরের প্রভাব এতটাই খারাপ যে, যার এই সম্বন্ধে কোন ধারনা নেই সে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর সমাধান কোন ডাক্তার বা চিকিৎসক দিতে পারে না। এবং এই রোগ নির্নয় ও অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমাধান শুধুমাত্র ধর্মীয় বানীর চিকিৎসা বা ঝাড় ফুক। ঝাড় ফুক ও তাবিজ এই বিষয়টা ও অনেকটা ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে। তাবিজ কবজ ব্যবহার করা অনেকটা নিষেধ রয়েছে। কিন্তু ঝাড় ফু ইসলাম শরিয়ত সম্মত। কেননা রাসুল (স:) অনেক সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাঈল (আ:) এর মাধ্যমে ঝাড় ফু্ নিতেন। পবিত্র কোরআনের শেষ দুই সূরা, ফালাক ও নাস এই দুই সুরার মাধ্যমে ও বিভিন্ন বিষয় থেকে পরিত্রানের বিষয় ফুটে উঠেছে। বদ নজর থেকে বাঁচার কিছু দোয়া কোরআন হাদিস থেকেঃ একদা জিবরাঈল (আ:) রাসুল (স:) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুল্লাহ আপনি কি অসুস্থতা বোধ করতেছেন? তিনি বললেন হ্যা, জিবরাঈল বললেন- بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ফুক করছি, সে সব জিনিস থেকে যা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে সব প্রাণের অনিষ্ঠ কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন। আল্লাহর নামে ঝাড় ফুক করছি। (জামে’ আত-তিরমিজি-৯৭২) রাসুল (স:) তার প্রিয় নাতি হযরত হাসান ও হুসাইন (রাযি) কে নিম্নোক্ত বাক্যগুলো পড়ে ঝাড় ফু করতেন। حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الْمِنْهَالِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ وَيَقُولُ ‏ “‏ إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ، أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ ‏”‏‏.‏ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (‘আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক (‘আঃ)-এর জন্য দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন। আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ঠ হতে পানাহ চাচ্ছি। এছাড়াও , চার কুল,আর্থৎ ১.সূরা কফিরুন ২.সূরা ইখলাস ৩.সূরা ফালাক ৪.সূরা নাস এগুলো পড়ে শরীরে ফু দিলে বদ নজরের প্রভাব অনেকটাই কেটে যায়। বদ নজর থেকে বাচার সব চেয়ে শক্তিশালি কোরআনের আয়াত হলো, আয়তুল কুরছি, যা পড়ে শরীরে ফু বা পানিতে ফু দিয়ে খেলে অনেক নিরাময় পাওয়া যায়। এছাড়াও আয়তুল কুরছির আমল যে ব্যক্তি সব সময় করে তার বিপদ আপদ অন্যদের তুলনায় কম হয়। আমরা যারা মুসলমান, আল্লাহকে মানি আমাদের উচিৎ সর্ব অবস্থায় আল্লাহর সহোযগিতা কামনা করা । সকল বিপদ আপদে আল্লাহর সাহায্য কামনা ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখা।